মসজিদে নববীর জমি ক্রয়ের মূল্য কে পরিশোধ করেন

মসজিদে নববীর জমি ক্রয়ের মূল্য কে পরিশোধ করেন

মসজিদে নববীর জমি ক্রয়ের মূল্য কে পরিশোধ করেন: মসজিদে নববী হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ সৌদি আরবে অবস্থিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদে নববী মসজিদুল হারামের পরে অবস্থান করে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে আসেন তখন মূলত তিনি মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পর মদিনার মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদে নববীর মূলত হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বাসগৃহে নির্মিত হয়েছিল। বিশ্বনবী সাঃ নিজের ব্যক্তিগতভাবে এই মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাসুলের যুগে মূলত মসজিদে নববী আদালত মাদ্রাসা মসজিদ সম্মিলনস্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিশ্বের মহামূল্যবান এই মসজিদের নববী সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান তাদের জন্য আজকে আমরা নিয়ে এসেছি একটি প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে আপনারা মসজিদে নববীর জমি ক্রয়ের মূল্য কে পরিশোধ করেন সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমরা আজকে আপনাদের উদ্দেশ্যে বিস্তারিতভাবে সকল তথ্য উপস্থাপন করব।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যক্তিগতভাবে মূলত মসজিদে নববী নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মসজিদে নববী হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদ যা মসজিদুল হারাম এর পরে অবস্থান করে। এই মসজিদটি মূলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম যখন মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেছিলেন তখন তিনি মদিনায় মসজিদে নববী নির্মাণ করেন। মূলত মসজিদে নববী রাসুলের হিজরতের পরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদে নববী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বাসগৃহে নির্মাণ করেছিলেন। সে সময় মসজিদে নববী মূলত মসজিদে সম্মিলনস্থল মাদ্রাসা ও আদালত হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীকালে কাল ক্রমে বিভিন্ন ধরনের মুসলিম শাসকগণ মসজিদে নববী মসজিদ সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবোধক করেছেন। মূলত ১৯০৯ সালে আরব উপদ্বীপের মধ্যে সর্বপ্রথম মসজিদে নববীতে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। মসজিদে নববী মূলত খাদেমুল হারমাইন শরিফাইনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। মসজিদে নববী মূলত ঐতিহ্যগতভাবে মদিনার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। রাসূলের যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে মসজিদে নববী প্রশংসনীয়। মসজিদে নববীর গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান বিদায় এখানে প্রতিবছর হাজিরা হজের সময় কিংবা ওমরা পালনের সময় আগে কিংবা পরে অবস্থান করে। মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ সাঃ ও খোলাফায়ে রাশেদিনের দুই খলিফা হযরত আবু বক্কর রাঃ ও ওমর রাঃ এর সমাধিস্থল মসজিদে অংশ হয়।

আরও পড়ুন: ইমাম আবু হানিফার জীবনী

মসজিদে নববীর জমি ক্রয়ের মূল্য কে পরিশোধ করেন

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ হচ্ছে মসজিদে নববী। যা মসজিদুল হারাম এর পরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পরে মূলত মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মূলত মসজিদ নববী নির্মাণের কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি পবিত্র স্থান এ মসজিদে নববী। তাইতো অনেক ইসলাম প্রিয় মানুষ মসজিদে নববী সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে চান। অনেকেই মসজিদে নববীর জমি ক্রয়ের মূল্য কে পরিশোধ করেন সে ব্যক্তির নাম সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য আজকে আমরা এই প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছি। যার মাধ্যমে আপনারা মসজিদে নববীর জমি ক্রয়ের মূল্য কে পরিশোধ করেন সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। নিচে মসজিদে নববী জমি ক্রয় মূল্য কে পরিশোধ করেন সেই সম্পর্কে তুলে ধরা হলো:

১. রাসূলের নিজের তৈরি মসজিদ ও শাসনকেন্দ্র

মদীনায় হিজরতের পরপরই রাসূল (সা.) এ মসজিদটি তৈরি করেন। মদীনায় প্রবেশের পর রাসূলের উটনী ‘কাসওয়া’ যে স্থানটিতে বসে পড়ে, সেই স্থানেই এ মসজিদটি তৈরি করা হয়। জমির মালিক তৎকালীন মদীনার বাসিন্দা দুই এতিম বালক সাহল ও সোহাইলের কাছ থেকে ১০ দিনারের বিনিময়ে এ জায়গাটি কিনে নেওয়া হয়, যা হযরত আবু বকর (রা.) পরিশোধ করেন। মুহাজির ও আনসারদের স্বেচ্ছাশ্রমে সাত মাসে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। রাসূল (সা.) নিজেও এই মসজিদের নির্মাণ কাজে অংশ নিয়েছিলেন।

জমির ছোট এক অংশে রাসূল (সা.) এর জন্য বাসস্থান তৈরি করা হয় এবং বাকি পুরো অংশে মসজিদ তৈরি করা হয়। নামাজ আদায়ের পাশাপাশি এ মসজিদ থেকেই রাসূল (সা.) মদীনার শাসনকাজ চালাতেন এবং এই মসজিদে বসেই সাহাবীদের সঙ্গে যাবতীয় বিষয়ে পরামর্শ করতেন।

১১ হিজরী মোতাবেক ৬৩২ ঈসায়ী সালে রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের পরও এই মসজিদ থেকে খোলাফায়ে রাশেদীন শাসনকাজ পরিচালনা করতে থাকেন। ৩৬ হিজরী মোতাবেক ৬৫৬ ঈসায়ীতে জঙ্গে জামালের যুদ্ধের পর হযরত আলী (রা.) এর মদীনা থেকে ইসলামী খেলাফতের রাজধানী কুফায় স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত এই মসজিদ থেকেই খেলাফতের যাবতীয় কাজ পরিচালনা করা হতো।

২. বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মসজিদ

মসজিদে নববীর বর্তমান স্থাপনাটির আয়তন ৩ লাখ ৮৪ হাজার বর্গ মিটার। মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের পর বিশ্বের বৃহত্তম এই মসজিদটি রাসূল (সা.) এর নির্মিত মূল মসজিদের অবকাঠামোর তুলনায় একশত গুণ বড়। অর্থাৎ পুরনো মদীনা শহরের চেয়ে মসজিদটি আকারে বড়। প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লী একসাথে এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।

রাসূল (সা.) এর সময়ে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানটি মদীনা শহরের খানিকটা বাইরেই ছিলো। মসজিদে নববীর অব্যাহত সম্প্রসারণের ফলে জান্নাতুল বাকী মদীনার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ার পাশাপাশি তা মসজিদের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে।

আরব উপদ্বীপের প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রাপ্ত স্থান

ওসমানী শাসকরা যখন আরব উপদ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেন, তখন তারা প্রথম মসজিদে নববীতে ১৯০৯ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ দেন। বলা হয়ে থাকে, ওসমানীয় সুলতানরা তাদের রাজকীয় প্রাসাদে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পূর্বেই মদীনার মসজিদে নববীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন।

রাসূল (সা.) এর রওজা

রাসূল (সা.) কে তার ইন্তেকালের মসজিদ সংলগ্ন তার বাসস্থানে হযরত আয়েশা (রা.) এর কক্ষে দাফন করা হয়। তবে আজকের মতো রাসূল (সা.) এর বাসস্থান মসজিদের সাথে সংযুক্ত ছিলো না। মসজিদের থেকে তার আলাদা অবস্থান ছিলো।

রাসূলের ইন্তেকালের বহুদিন পর্যন্ত তার রওজা মসজিদ থেকে স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত ছিলো। উমাইয়া খলীফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের শাসনামলে (৭০৫-৭১৫) মসজিদের সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ করতে গিয়ে মসজিদের সাথে রওজাকে সংযুক্ত করে ফেলা হয়।

৫. রাসূলের স্মৃতিচিহ্ন

রাসূল (সা.) এর বাসস্থানের নিকটেই ছিলো তার মেয়ে হযরত ফাতেমা (রা.) এর বাসস্থান। মসজিদে নববীর পরবর্তী কালের সম্প্রসারণকালে এই বাসস্থানও মসজিদের স্থাপনার অর্ন্তভুক্ত হয়ে পড়ে। রাসূল (সা.) এর ব্যবহৃত দ্রব্যসহ বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন এখানে সংরক্ষিত ছিলো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন-ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন মিত্রশক্তির সমর্থন পাওয়া আরব বিদ্রোহীদের হাতে মদীনা অবরোধের মুখে পড়লে মদীনার ওসমানী গর্ভনর বিভিন্ন অমূল্য সম্পদের সাথে রাসূল (সা.) এর সংরক্ষিত স্মৃতিচিহ্নসমূহও তৎকালীন ওসমানী সালতানাতের রাজধানী ইস্তানবুলে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে রাসূল (সা.) এই স্মৃতিচিহ্নসমূহ তুরস্কের ইস্তানবুলের তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

৬. রওজার ওপরের গম্বুজ

রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের ছয় শত পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত তার রওজার ওপর কোনো প্রকার গম্বুজ ছিলো না। ৬৭৮ হিজরী মোতাবেক ১২৭৯ ঈসায়ীতে মিসরের মামলুক সুলতান সাইফউদ্দীন কালাউনের শাসনামলে রাসূলের রওজার ওপরে প্রথম একটি কাঠের গম্বুজ তৈরি করা হয়। এই গম্বুজের ভেতরের দিকে রাসূল (সা.), হযরত আবু বকর (রা.) এবং হযরত উমর (রা.) এর নাম অঙ্কিত আছে।

১৪৮১ ঈসায়ীতে মসজিদে নববীতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই অগ্নিকাণ্ডে মসজিদের বিপুল ক্ষতি হয় এবং রওজার ওপরে থাকা গম্বুজ ধ্বসে পড়ে রাসূল (সা.) এর কবর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তৎকালীন মিসরের মামলুক সুলতান সাইফউদ্দীন আল-আশরাফ কাইতবে মসজিদের নতুন করে সংস্কার করেন। তিনি রওজার ওপরে কাঠের তৈরি গম্বুজটি নতুন করে তৈরি করেন এবং একে সীসার পাত দিয়ে ঢেকে দেন।

১৮১৮ সালে ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ কাঠের গম্বুজটির ওপর বর্তমান ইটের তৈরি সবুজ গম্বুজটি তৈরি করেন।

৭. নীলবেগুনী গম্বুজ

মসজিদে নববীতে রওজার ওপরের বর্তমান সবুজ গম্বুজটি প্রথমেই সবুজ রঙের ছিলো না। ১৮১৮ সালে এই গম্বুজটি তৈরির আগে এর নিচে থাকা কাঠের গম্বুজটি প্রথমে রঙবিহীন পরবর্তীতে সাদা রঙে রাঙানো হতো। ১৮১৮ সালে কাঠের গম্বুজের ওপর বর্তমান গম্বুজটি তৈরি হলে তাও প্রথম সাদা রঙে রাঙানো হয়। পরে তা তৎকালীন হিজাজী আরবদের রুচি অনুযায়ী নীল-বেগুনী রঙে রাঙানো হতো। ১৮৩৭ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের আদেশে প্রথম গম্বুজটি সবুজ রঙে রাঙানো হয়।

৮. রাসূল (সা.) এর পাশের শূন্য কবর

রাসূল (সা.) এর পাশে হযরত আবু বকর (রা.) এবং হযরত উমর (রা.) এর কবরের পর তৃতীয় একটি খালি কবর রয়েছে, যাতে কাউকে দাফন করা হয়নি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) এর হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত ঈসা (আ.) যখন পুনরায় পৃথিবীতে আসবেন, তখন তার স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ার পর তাকে এখানেই দাফন করা হবে।

. ছয়টি মিহরাব

অধিকাংশ মসজিদের সাধারণত একটি মিহরাব থাকে। কিন্তু মসজিদে নববীতে মিহরাবের সংখ্যা ছয়টি।  রাসূল (সা.) এর সময় একটি মিহরাব তৈরি হয় এবং এখানেই তিনি নামাজ পড়াতেন। এটি মিহরাব নববী নামে পরিচিত।

হযরত উসমান (রা.) এর সময়ে ২৯-৩০ হিজরি মোতাবেক ৬৪৯-৬৫০ ঈসায়ীতে মসজিদের সংস্কার ও সম্প্রসারণের সময় নতুন একটি মিহরাব তৈরি করা হয়। তার নামে এটির নামকরণ করা হয় মিহরাব উসমানী।

ওসমানী সুলতান সুলাইমানের সময় ৯৩৮ হিজরী মোতাবেক ১৫৩১ ঈসায়ীতে তৃতীয় একটি মিহরাব তৈরি করা হয়। তার নামে এটি মিহরাব সুলাইমানী নামে পরিচিত। এসময় হানাফী ইমামরা এই মিহরাবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াতেন এবং মালিকী ইমামরা রাসূলের মিহরাবে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াতেন। হানাফী ইমামরা এতে নামাজ পড়াতেন বলে এটি মিহরাব হানাফী নামেও পরিচিত।

মিহরাব সুলাইমানী (বামে), মিহরাব নববী (মাঝে) ও মিহরাব উসমানী (ডানে)

এই তিনটি মিহরাব ছাড়াও মিহরাব ফাতেমা, মিহরাব তাহাজ্জুদ ও মিহরাব শাইখ আল-হারাম নামে আরও তিনটি মিহরাব আছে।

১০. রাওদাতুল জান্নাত (জান্নাতের বাগান)

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমার ঘর এবং আমার মিম্বরের মাঝে জান্নাতের বাগানের একটি অংশ আছে এবং আমার ঝর্ণার (হাউজে কাউসার) উপর আমার মিম্বার অবস্থিত।” (বুখারী)

মসজিদে নববীর মিম্বার

বর্তমানে এই অংশটি বিশেষ সবুজ কার্পেটে মুড়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং এটি সংক্ষেপে রাওদা নামে পরিচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *