মোবাইল হ্যাক ও ট্র্যাক থেকে বাঁচার উপায়

মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় || মোবাইল ট্র্যাকিং থেকে বাচার উপায়

মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়: মোবাইল ফোন বর্তমান যুগের মানুষের জীবনে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস যা দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সাহায্য করে থাকে। কথা বলা থেকে শুরু করে ইন্টারনেটের ব্যবহার স্মার্ট মোবাইল ফোনের বিভিন্ন ধরনের গেম ও দৈনন্দিন জীবনে অনলাইনের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় সকল ধরনের কার্যক্রমে এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। এই মোবাইল ফোন যেমন মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে তেমনি মোবাইল ফোনের অপব্যবহার মানুষের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনেকেই অপরাধ জগতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এখন বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোবাইল ফোনে সকল অপরাধীর সনাক্তকরণ কার্যক্রমটি সম্পন্ন করতে পারছি। আবার অনেকেই প্রতিনিয়ত অন্য যেকোনো ব্যক্তির মোবাইল ফোন হ্যাক কিংবা ট্র্যাক করে তার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করছে। তাই আজকে সকলের উদ্দেশ্যে মোবাইল হ্যাক হয়ে ট্র্যাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আপনাদের মাঝে তথ্যগুলো তুলে ধরেছি।

মোবাইল হ্যাক বলতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে একজন মানুষের মোবাইলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডেটা নিজের আয়ত্তে আনা কে বোঝায়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে সহজেই এন্ড্রয়েড ফোনের ব্যক্তির ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও ডেটা হ্যাক করা যাচ্ছে। এমনকি এই সফটওয়্যার গুলোর মাধ্যমে সহজেই মোবাইল ফোনকে ট্রাক করাও যাচ্ছে। তাইতো এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধী ধরা থেকে শুরু করে ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করার জন্য এসব সফটওয়্যার সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই এই সফটওয়্যার গুলোর মাধ্যমে অপরাধীকে কিংবা সমাজের জন্য ক্ষতিকর ব্যক্তিদের সহজেই সনাক্ত করছে আবার অনেকেই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অন্যের ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করছে। প্রতিনিয়ত এখন আমাদের মাঝে যেমন মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার চালু হয়েছে তেমনি মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের কারণে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্য সংঘটিত হচ্ছে। কারো অনুমতি ব্যতীত কারো মোবাইল থেকে কোনরকম তথ্য কিংবা কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে কোন কিছু জানা অবশ্যই অপরাধ। তাই আমাদের অবশ্যই এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে এবং আমাদের পরিচিতদের বোঝাতে হবে।

আরও পড়ুন: IMEI নাম্বার দিয়ে মোবাইল লোকেশন

মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায়

বর্তমান সময়ে মোবাইল হ্যাক সকলের কাছে একটি পরিচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারণে অনেকেই হ্যাকারদের আক্রমণে পড়ছে এবং তাদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন ধরনের তথ্য হ্যাকাররা চুরি করে তাদের কাজে লাগাচ্ছে। এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এর মাধ্যমে এখন সহজেই মোবাইল হ্যাক করা সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল হ্যাকের মাধ্যমে অনেকেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে ফেলছে। তাইতো আমরা আজকে মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আপনাদের মাঝে একটি প্রতিবেদন শেয়ার করব যা আপনাদের মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় জানাবে। আপনি আজকের এই উপায় অবলম্বন করলে সহজেই মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচতে পারবেন। নিচে মোবাইল হ্যাক থেকে বাঁচার উপায় গুলো তুলে ধরা হলো:

১. পাসওয়ার্ডের সঠিক ব্যবহার

ইন্টারনেট বা অনলাইনে সিকিউরিটি নিয়ে যখন কথা হয়, তখন পাসওয়ার্ড ব্যাপারটা সবার মাথাতেই চলে আসে। পাসওয়ার্ড হচ্ছে আপনার কোন ওয়েবসাইট কিংবা কোন প্রোগ্রাম খোলার একটা চাবি বা কিছু কিওয়ার্ডস।

পাসওয়ার্ড জিনিসটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে হ্যাকিং থেকে বেচে যাওয়া সম্ভব। যেমন অনেকেই আছে পাসওয়ার্ড হিসেবে 123456 কিংবা AABBCCDD এই টাইপের সহজ কিছু ক্যারেক্টার বসিয়ে দেন সহজে মনে রাখার জন্য।

কিন্তু এটা অনেক বড় একটা মিস্টেক। একটা আদর্শ পাসওয়ার্ড মিনিমাম ৮-১২ ক্যারেক্টারের হওয়া উচিত। এতে থাকতে পারে একটা মিনিংফুল ওয়ার্ড, কিছু সংখ্যা, এবং ১-২ টা চিহ্ন।

যেমনঃ florida45#*&

এরকম যদি আপনার পাসওয়ার্ড হয়, তাহলে কারো পক্ষে সেটা আন্দাজ করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।

২. অপরিচিত কোন লিংকে ক্লিক করবেন না

আপনি হয়তো একটা ইমেইল পেলেন, ওখানে একটা অফার দেখলেন বা লোভনীয় কিছু দেখলেন কিন্তু আপনি ইমেইল সেন্ডারকে ও চিনেন না, কিংবা যে সার্ভার থেকে মেইলটা আসছে সেটা ও আপনার পরিচিত নাহ, এমন অবস্থায় এই টাইপের ইমেইল ওপেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

শুধু ইমেইলেই নাহ, আপনি ফেসবুক, টুইটার, কিংবা ইনস্টাগ্রাম ইনবক্সে ও অসংখ্য এমন ম্যালিশিয়াস লিংকস পাবেন। আপনাকে এসব লিংক থেকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

এভাবে আপনার অনেক পার্সোনাল তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারের কাছে।

৩. ক্র্যাক সফটওয়ার ইউজ করা থেকে বিরত থাকুন

আমরা কম্পিউটারে অনেক প্রিমিয়াম সফটওয়ার কিনে ইউজ না করে ক্র্যাক ফাইল ইউজ করে থাকি, যা পুরোপুরি বে-আইনি। একই ভাবে কিছু অসাধু হ্যাকাররা এসব ক্র্যাক সফটওয়ারের মধ্যে ওদের হ্যাকিং স্ক্রিপ্ট বসিয়ে সেসব অনলাইনে ফ্রিতে বিতরন করে।

অনেকেই না বুঝে সেসব ডাউনলোড করে হ্যাকিং এর শিকার হয়ে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় হ্যাকার তাদের কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ কিংবা বিশেষ কিছু তথ্যের এক্সেস নিয়ে নেয়। এবং নির্দিষ্ট পরিমান কিছু টাকা দাবি করে সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে।

এই ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা থেকে বাচতে চাইলে অবশ্যই শুধুমাত্র জেনুইন এবং অরিজিনাল সফটওয়ার ব্যবহার করতে হবে সর্বদা।

৪. এন্টি-ভাইরাস সফটওয়ার ইউজ করুন

কম্পিউটারের সুরক্ষার জন্য এন্টি-ভাইরাসের কোন বিকল্প নেই। আপনার কম্পিউটারের সর্ব প্রকার সিকিউরিটির জন্য আপনাকে অবশ্যই একটা প্রিমিয়াম এন্টি-ভাইরাস সফটওয়ার ব্যবহার করা উচিত।

এতে করে এন্টি-ভাইরাস নিজে থেকেই অনেক সাসপিশিয়াস ওয়েবসাইট এবং প্রোগ্রাম ব্লক করে দিয়ে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। আর নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রোপার আপডেট এবং স্ক্যানের মাধ্যমে আপনি আপনার পিসির হেলথ সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন।

কোন প্রকার ভাইরাস থাকলে সেটা আপনার স্ক্যানে ধরা পড়বে এবং রিমুভ ও করা যাবে।

এটা আপনার হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।

৫. শুধু বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে অনলাইন শপিং করুন

অনলাইনে শপিং এখন অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে শপিং এর সময় আমাদের ব্যাংক বা কার্ড ডিটেলস সহ অনেক সেনসিটিভ তথ্য আমাদেরকে শেয়ার করতে হয় ওই ওয়েবসাইটের সাথে। এখন আমরা যদি অপরিচিত কিংবা আন-ট্রাস্টেড কোন ওয়েবসাইটে এসব তথ্য শেয়ার করি, তাহলে আমাদের এই ডাটা গুলো হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই শুধু মাত্র ট্রাস্টেড এবং রিলায়েবল ওয়েবসাইট গুলো থেকেই শপিং করা উচিত। এতে করে আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকার সম্ভাবনা বেশী।

৬. সব ধরনের পপ-আপ এডস ইগনোর করুন

আমরা যখন তথ্য খুজতে এই সাইট, ওই সাইটে ঘুরে বেড়াই, তখন হয়তো দেখি কিছু ওয়েবসাইটে পপ-আপ উইন্ডো ওপেন হচ্ছে। ওসব হচ্ছে পপ-আপ এডস।

এসব এডস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্পাম বা সস্তা বিজ্ঞাপন হয়ে থাকে।

এধরনের সকল পপ-আপ ইগনোর করতে হবে।

৭. পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে বিরত থাকুন

পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের ফলে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কারন ওখানের নেটওয়ার্ক পাবলিক হওয়ার কারনে যে কেউ এক্সেস করতে পারে এবং একটা পর্যায়ে আপনার ডিভাইস ও হ্যাকড হতে পারে।

আর যদি ইমার্জেন্সি কোন কারনে আপনাকে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে একটা ভালো মানের প্রিমিয়াম ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত। দেখা যায় অনেকাংশে ভিপিএন আপনার নেটওয়ার্ক স্ট্যাটাস, লোকেশন, আই পি ইত্যাদি চেঞ্জ করে বা হাইড করে আপনাকে সুরক্ষিত রাখে।

৮. একাধিক ইমেইল ব্যবহার করুন

একাধিক ইমেইল ব্যবহার করার মুল কারন হচ্ছে একটার সাথে আরেকটাকে রিকভারি মেইল বা সেকেন্ডারি মেইল হিসাবে যুক্ত করে রাখা। যদি আপনার নির্দিষ্ট কোন ইমেইলে সমস্যা হয়, তাহলে ও যেন আপনি আপনার সেকেন্ডারি ইমেইল দিয়ে আপনার জরুরি ওয়েবসাইট এক্সেস করতে পারেন কিংবা আপনার মুল ইমেইল রিকভার করতে পারেন।

৯. টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন এড করুন

ফেসবুক সহ নানা ওয়েব সাইটে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন অপশন চালু রয়েছে। এটা খুবই স্ট্রং একটা প্রসেস। এর ফলে কেউ কোন ওয়েবসাইটে লগিন করতে চাইলে দুইটা স্টেপ পার হয়ে যেতে হবে।

যেমনঃ হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড পেয়ে গেছে, এখন সে পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করলেই কিন্তু সে আপনার একাউন্টের এক্সেস পেয়ে যাবে। কিন্তু টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু থাকলে তাকে পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরে ইমেইল কিংবা ফোনের মাধ্যমে আবার ও একটা কোড দিয়ে ভেরিফাই করে তারপর লগিন করতে হবে।

সো বুঝাই যাচ্ছে এই পদ্ধতিটা কতটা ইফেক্টিভ।

এই পদ্ধতি গুলো যদি আপনি প্রোপারলি ফলো করেন, তাহলে আশা করা যায় যে আপনি অনাকাঙ্ক্ষিত হ্যাকিং এর শিকার হবেন না।

মোবাইল ট্র্যাক থেকে বাঁচার উপায়

পাঠক বন্ধুরা এখন আপনাদের উদ্দেশ্যে মোবাইল ট্র্যাক থেকে বাঁচার উপায় গুলো আপনাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করব। আপনারা যারা প্রতিনিয়ত মোবাইল ট্র্যাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে তথ্যগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন। তারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আজকের এই প্রতিবেদন থেকে মোবাইল ট্রাক থেকে বাঁচার উপায় গুলো দেখে নিন। আপনি আজকের এই উপায় গুলো আপনার নিজের মোবাইল ফোন ট্র্যাক থেকে বাঁচার জন্য অবলম্বন করতে পারবেন এবং আপনার পরিচিত প্রতিটি মানুষকে এই শেয়ার করার মাধ্যমে তাদেরকে মোবাইল ট্র্যাক থেকে বাঁচাতে পারবেন। নিচে আপনাদের উদ্দেশ্যে মোবাইল ট্র্যাক থেকে বাঁচার উপায় গুলো তুলে ধরা হলো:

ট্র্যাকিং থেকে বাচার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম অযাচিত সফটওয়্যার ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনার মোবাইল ফোনের লোকেশন বেশি প্রয়োজনীয় না হলে বন্ধ রাখতে হবে।

আপনার ফোনের জিপিএস বন্ধ রাখতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় কোন লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

উল্লেখিত কয়েকটি বিষয়ে আপনি যদি আমলে রাখতে পারেন, তাহলে মোবাইল থেকে থেকে বেঁচে ফেরা খুব বেশি দুঃসাধ্য কিছু নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *