শেখ সাদীর উপদেশ: আল্লামা শেখ সাদী (রহ.) ছিলেন একজন ফার্সী কবি, দার্শণিক, যুগ শেষ্ঠ সাধক। তাঁর আসল নাম: মুসলিহুদ্দীন। উপাধী: শরফুদ্দীন, উপনাম: সাদী। তবে তিনি শেখ সাদী নামে পরিচিত। তিনি তার লেখনিতে জীবন বদলে দেওয়ার মতো বহু উপদেশ দিয়ে গেছেন। তিনি সর্বস্তরের মানুষের জন্য বারটি পুস্তক/পুস্তিকা রচনা করেন। তন্মধ্যে গুলিস্তাঁ, কারীমা, দেওয়ানে সাদী প্রসিদ্ধ।
১২১০ খ্রিষ্টপূর্বে ইরানের সুপ্রসিদ্ধ সিরাজ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন আবু মুহাম্মদ মুসলেহুদ্দীন ইবনে আব্দুল্লাহ শিরাজি বা শেখ সাদী এবং সেই দেশের রাজ দরবারে শেখ সাদীর পিতা চাকরি করতেন। শেখ সাদীর পিতার নাম সৈয়দ আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম মাইমুরা খাতুন। কৈশরের আগেই শেখ সাদীর পিতা পরলোকগমন করেন। যার ফলে কবির ছেলেবেলা কেটেছিল অনেক কষ্টে। কিভাবে ছেলেকে মানুষ করবে তা নিয়েই ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন শেখ সাদীর মা। কতটা কষ্টে শেখ সাদী এবং তার মা দিনাতিপাত করেছেন তা কবি নিজেই বর্ণনা করেছেন।
আরও পড়ুন: ম দিয়ে ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ|| ম দিয়ে ছেলে ও মেয়েদের আধুনিক নাম
বন্ধুরা আপনাদের সুবিধার্থে আমরা চেষ্টা করেছি আপনারা দারুন সব শেখ সাদীর উপদেশফেসবুকে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে চলুন শেখ সাদীর উপদেশ, উক্তি গুলো দেখে নেয়া যাক। আপনি এটি শুধু ফেসবুকে নয় অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতেও পোস্ট করতে পারেন। তাই নিচে থেকে আপনাদের শেখ সাদীর উপদেশ উক্তি গুলো দেখে নিন।
শেখ সাদী (রহ.) এর জীবন বদলে দেওয়ার মতো ৩৫ টি উপদেশ:
১) কখনো উদারতা, নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে কথা বল। এতে হয়তো নিতান্ত অভদ্র লোকও বশীভূত হবে। আবার কখনো কঠোরতা ও নির্মমতার সাথে কথা বল। কেননা কখনো কখনো একটা মাকাল ফল ধারা যে কাজ হয় শত শত মিস্ত্রির পেয়ালা দ্বারাও হয়না।
২) অসৎ লোকদের প্রতি দয়া দেখানো সৎ লোকদের ওপর অত্যাচারের শামিল। আবার জালেমদেরকে ক্ষমা করা নিরীহ লোকদের প্রতি জুলুম করার শামিল। যদি তুমি কোনো দুষ্ট লোককে সহায়তা ও দয়া করো। তাহলে জেনে রেখো, সে তোমার উসিলায় আরো বেশি অপরাধ করবে। তুমিও তাতে শরীর থাকবে।
৩) রাজা-বাদশাহর গ্রহণের বন্ধুত্বের স্থায়িত্বের উপর ভরসা করা উচিত নয়। কারণ একটা সামান্য ধারণার দ্বারা তা বদলে যায়।
৪) তোমার গোপন কথা অন্তরঙ্গ বন্ধুকে বলো না। কারণ তুমি জানো না যে একসময় সে শত্রু হয়ে যেতে পারে। তখন সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আবার শত্রুকে যতটা ক্ষতি করা সম্ভব ততটা করুণা। হয়তো কোনদিন সে বন্ধু হয়ে যেতে পারে। তখন লজ্জিত হতে হবে।
৫) কারো কাছে নিজের অন্তরের কোনো গোপন কথা না বলে নীরব থাকা উত্তম কারো কাছে বলে অন্যের কাছে বলতে নিষেধ করার চেয়ে। হে বুদ্ধিমান ব্যক্তি! ঝরনা বন্ধ করতে চাইলে প্রথমে তার উৎস মুখ বন্ধ করে দাও। কারণ বিরাট আকার ধারণ করলে তা বন্ধ করা সম্ভবপর হবে না।
৬) শত্রু দুর্বল হয়ে যদি তোমার বশীভূত হয় এবং বন্ধুত্ব দেখায়। তবে তার উদ্দেশ্য এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, সে এই অবসরে শক্তি সঞ্চয় করে আরো শক্তিশালী শত্রু হবে। প্রবাদ আছে, বন্ধুত্বের ওপর বিশ্বাস নেই যখন শত্রু চাটুকারিতা সমুদ্রের উপর ভরসা কিসের।
৭) যে আগুন তুমি নিভাতে সক্ষম তা আজ নিভিয়ে দাও। কেননা তা যখন উপরে উঠবে সারা বিশ্বকে জ্বালিয়ে দিরে।
৮) দুই শত্রুর সামনে এমন ভাবে কথা বলো, যেন তারা পরস্পরে কোনদিন বন্ধু হলে তুমি লজ্জিত না হও।
৯) যে ব্যক্তি একাকী শত্রুদের সাথে সন্ধি করে সে মূলত: বন্ধুদের ক্ষতি করার ইচ্ছা রাখে। হে বিবেকবান! তুমি ঐ বন্ধু হতে হাত উঠিয়ে নাও যে তোমার শত্রুদের সাথে উঠা বসা করে।
১০) যখন তুমি কোন কাজ করতে ইতস্তত ভূত করো তখন ওই দিক অবলম্বন করো যার দুঃখ-কষ্ট বিহীন সম্পন্ন হয়।
১১) যতক্ষণ কোন কাজ টাকা-পয়সার দিয়ে অর্জিত হয় ততক্ষণ জানকে কষ্টের নিপতিত করা ঠিক নয়।
১২) শত্রুর নিরুপায়ের ক্ষেত্রে তার প্রতি অনুগ্রহ করোনা। কারণ সে যখন সময় হবে তখন তোমার উপর দয়া করবে না।
১৩) যে ব্যক্তি কোন অত্যাচারীকে হত্যা করল সে যেন মাখলুককে তার অত্যাচার হতে রক্ষা করল এবং সেও রক্ষা পেল আল্লাহর শাস্তি হতে। ক্ষমা করা পছন্দনীয় কাজ। তবে মাখলুককে কষ্ট দানকারী ক্ষতস্থানে পট্টি লাগিও না। যে ব্যক্তি সাপের উপর দয়া করলো। সে জানে না যে, এটা আদম সন্তানের উপর জুলুম করা হলো।
১৪) শত্রুর উপদেশ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ অন্যায়। তবে তার শোনা বৈধ। যাতে তার বিপরীত কাজ করতে পারো। কেননা, সেটাই সঠিক। যদি সে তীরের নেয় সোজা রাস্তা ও দেখায় তুমি তা থেকে ফিরে যাও এবং বাঁ দিকের রাস্তা অবলম্বন করো।
১৫) কঠোরতা ও নম্রতা স্থান-কাল-পাত্র বিশেষ উভয়টি উত্তম। যেমন: অস্ত্রোপচারকারী (ডাক্তার) অপারেশনও করে, আবার ব্যান্ডেজও লাগায়। জ্ঞানীগণ অতিরিক্ত কঠোরতা অবলম্বন করেন না। আবার এমন ব্যবহার করে না যাতে নিজের মর্যাদাহানি হয়। না নিজেকে অতি উচ্চ মনে করে আবার না অতি তুচ্ছ জ্ঞান করে।
১৬) দুই ব্যক্তি রাজ্য ও ধর্মের শত্রু। ১/ ধৈর্যহীন বাদশাহ। ২/ মূর্খ দরবেশ
১৭) অসচ্চরিত্র বান ব্যক্তি এমন শত্রুর কবলে আবদ্ধ যে, সে যেখানেই যাক না কেন শত্রু কবল হতে রক্ষা পায়না। কুচরিত্রের মানুষ যদি বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আকাশেও চলে যায়। তথাপি সে নিজের কুস্বভাবের কারণে বিপদে পতিত হবে।
১৮) সাবধান! প্রশংসা করো প্রশংসা শুনবে না। কেননা তার পুঁজি কম। সে তোমার থেকে এর বিনিময়ে উপকার হাসির আশা রাখে। যদি কোন দিন তুমি তার আশা পূরণ না করো তবে দ্বিগুণ করে তোমার দুর্নাম রটনা করবে।
১৯) প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের দিয়ে পরিপূর্ণ মনে পড়ে। যদি ভূপৃষ্ঠ হতে ক্ষণিকের জন্য জ্ঞান-বুদ্ধি উঠে যায়। তারপরেও কোন ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণা করবে না যে, আমি নির্বোধ।
২০) সংকীর্ণ পাকস্থলী একটি রুটি দ্বারা পূর্ণ হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র চক্ষু লোভীকে সমগ্র দুনিয়ার সম্পদও পূর্ণ করতে পারেনা।
২১) অত্যাচারীর চেয়ে দুর্ভাগা কেউ নেই। কেননা বিপদকালে কেউ তার বন্ধু থাকে না।
২২) মুরগির বাচ্চা ডিম হতে বের হয়ে আহার খোঁজ করে পক্ষান্তরে মানুষের বাচ্চা তখন কোন খবর ও বুদ্ধি-বিবেচনা রাখেনা। তাকে বড় ও বুদ্ধি-বিবেচনা সম্পন্ন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। ফলে, উভয়ের মাঝে পার্থক্য কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মোরগের ওই বাচ্চাটি হঠাৎ উপযুক্ত হয়ে গেলো ঠিকই। কিন্তু মূল্যবান কিছু হতে পারল না। অথচ মানুষ মান-সম্মান ও মর্যাদার দিক দিয়ে সবার উপরে।
২৩) নির্বোধ ব্যক্তির জন্য চুপ থাকার চেয়ে উত্তম কোন কাজ নেই অর্থাৎ থাকায় তার জন্য উত্তম কাজ। যদি সে এ লাভটি জানত তাহলে নির্বোধ থাকত না।
২৪) এক বোকা এক গাধাকে শিক্ষা দিচ্ছিল। জ্ঞানী ব্যক্তি তাকে সম্বোধন করে বলে: ওহে গণ্ডমূর্খ! তুমি (বৃথা) কি চেষ্টা করছো। পশু কখনো তোমার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে না বরং তুমি পরশু থেকে চুপ থাকা শিখে নাও।
২৫) যার গঠনাকৃতি সুন্দর তার চরিত্র ভালো হবে, এমনটিই নয়। কাজের সম্পর্ক অন্তরের সাথে, চামড়ার সাথে নয়।
২৬) পেট হল হাতের বেরি এবং পায়ের শিকল। পেট পূজারী ব্যক্তি খুব কমই আল্লাহর ইবাদত করে।
২৭) কোন জ্ঞানী ব্যক্তি যদি মূর্খদের সাথে উঠাবসা করে তাহলে তার জন্য তাদের থেকে সম্মানের আশা করা উচিত নয়। কোন মূর্খ যদি গালমন্দে কোন জ্ঞানীর উপর জয়ী হয়। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। কেননা সে ওই পাথরের ন্যায় যা তাকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে।
২৮) যে যুবক নিজে খায় এবং অপরকে দান করে। সে ঐ ইবাদত কারী থেকে উত্তম যে নিজে খায় এবং জমা রাখে।
২৯) জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য অজ্ঞ লোকের অজ্ঞতা সহনশীলতার দ্বারা ক্ষমা না করা উচিৎ। কেননা এতে উভয়পক্ষের ক্ষতি হয়। আলেমের ভয় কমে যায় ও এর (মূর্খ লোকের) অজ্ঞতা মজবুত হয়।
৩০) বেনামাজিকে ঋণ দিও না। যদিও অনাহারে তার মুখ খোলা থাকে। অর্থাৎ অনাহারে সে মৃত্যুবরণ করে। কারণ সে যখন আল্লাহর ফরজ আদায় করে না। সুতরাং তোমার ঋণের ব্যাপারে সে কোনো চিন্তা রাখবে না।
৩১) তুমি রিজিকের চেষ্টা করো আর না করো আল্লাহ তোমার রিজিক পৌঁছে দিবেন। যদি তুমি সিংহ ও বাঘের মুখের মধ্যেও চলে যাও। তবুও সে তোমাকে মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে খাবে না।
৩২) বাদশাহর উপহার প্রদত্ত পোশাক যদিও সম্মানজনক, তবে নিজের পুরনো পোশাক অধিক সম্মানিত। ধনীদের দস্তরখানা অর্থাৎ একখানা যদিও সুস্বাদু, নিজের ছেড়া থলির শুকনো রুটি অধিক স্বাদের।
৩৩) বদমেজাজ মানুষের সাথে বিনম্র ও ভদ্র আচরণ করো না কেননা মরিচা পড়া লোহা রেত দ্বারাই পরিষ্কার হয়।
৩৪) কুকুরের এক লোকমা খাবার কখনো ভুল হয় না। (এক লোকমা আহার কোথাও পেলে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও পাহারাদারি করে) যদিও তুমি তাকে শতবার পাথর নিক্ষেপ করো। পক্ষান্তরে তুমি কোন ইতর মানুষকে সারাজীবন প্রতিপালন করো। তোমার সামান্য কথায় সে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
৩৫) জনৈক বুজুর্গ কি এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিল ডান হাতের মর্যাদা তো অনেক বেশি। তথাপি মানুষ বাম হাতে কেন এটি পরিধান করে। তিনি বললেন তুমি কি জানো না যে প্রকৃত মর্যাদাশীলগণ সবসময় বঞ্চিত থাকে।