চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজানোর উপায়

নতুন চুল গজানোর উপায়-প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনাদের চুল পড়ে যাচ্ছে অথবা মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে এমন সমস্যা অনেকেরই। বন্ধুরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দুটি কাজ করতে হবে। একটি হলো চুল ঝরে যাওয়া রোধ করা, অপরটি নতুন চুল গজানো। চুল ঝরে যাওয়া রোধ করা নিয়ে আমরা প্রায়ই বিভিন্ন টিপস দেখি। সেই তুলনায় নতুন চুল গজানোর উপায় নিয়ে জানার সুযোগটা কম। তাহলে বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক নতুন চুল গজানোর 8টি উপায়!

বন্ধুরা মূলত, আমাদের বয়স বাড়ার কারণে অথবা বংশগত বা পরিবেশের প্রভাবে চুল পড়ে যেতে থাকে। এ কারণে আমাদের মন তো খারাপ হয়ই, আবার মনে হয় যদি কৈশোরের মতো চুল আবার হতো কোনো ভাবে। আমাদের মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পে যদি আমরা উদ্দীপনা দিতে পারি, তাহলে মাথায় নতুন চুল গজানো সম্ভব। প্রতিটি চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা রয়েছে। এটাকে যদি বাড়ানো যায়, তাহলেও নতুন চুল গজানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় জেনে নিন।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

নিমপাতার ব্যবহার: আমাদের ত্বকের নানা সমস্যা সারাতে নিমপাতা বেশ পরিচিত। শুধু তক নয় চুলের যত্নেও নিম পাতার কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এই নিম পাতা। নিম পাতার একটি ডাল নিয়ে এক লিটার পানিতে ফুটিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটি ঠান্ডা করে বোতলে ভরে ফেলুন। মাথায় শ্যাম্পু করার পর একদিন নিম পাতার এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। মাথার ত্বকে যেকোনো ধরনের সংক্রমণ বা খুশকি জাতীয় সমস্যা থাকলে তা দূর করতে এই নিমপাতা সাহায্য করবে। এতে আমাদের চুলের গোড়াও শক্ত হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

মেথি: মেথি একটি চুলের যত্নে উপকারী উপাদান হিসেবে আমরা ব্যবহার করি। এটি আমাদের মাথায় নতুন চুল গজাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিষ্কার পানিতে সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখতে হয়। সকালে উঠে সেগুলোকে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর সেই ব্লেন্ড করা মেথি চুল সরাসরি ব্যবহার করুন অথবা ২ মধুর সঙ্গে মিশেও লাগাতে পারেন। এরপর শুকনো রোদে কিছুক্ষণ থাকার পর শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবং এরপর হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

পেঁয়াজের রস: এটি চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কয়েকটি পেঁয়াজ ভালোভাবে বেটে নিয়ে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপর সেই মিশ্রণ মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট পর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নেবেন। এভাবে সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে চুল পড়া বন্ধ ও স্কেলের অনেক সমস্যা দূর হতে পারে এবং নতুন চুল গজাবে।

নতুন চুল গজানোর উপায়

পাঠক বন্ধুরা এখন তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, মাথায় নতুন চুল গজানোর ৪ টি উপায়।

প্রথম উপায়: বন্ধুরা প্রথম উপায় হলো ভালো করে ম্যাসাজ করা। নিয়মিত চুল ম্যাসাজ করতে হবে। এতে করে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং স্ক্যাল্প উদ্দীপিত হবে। এক টেবিল চামচ ভিটামিন ই নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করতে থাকুন। ভিটামিন ই চুলের জন্য প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন এর যোগান দেয়। আপনারা চাইলে ভিটামিন ই এর সাথে চা এর নির্যাস যোগ করতে পারেন। এই দুটো ভালো ভাবে মিশিয়ে হাতের তালু এবং আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো মাথার চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে নিন। ৫-৬ মিনিট ম্যাসাজ করতে থারুন। তারপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিন। চুলগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে সম্পূর্ণ চুল আঁচড়ে নিতে হবে।

কিছুক্ষণ পর সাধারণ ভাবে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। চুল গজানোর জন্য দিনে ৩ বার ম্যাসাজ করতে হবে এই নিয়মে। কিন্তু বারবার শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। এতে চুলের অনেক ক্ষতি হবে।

দ্বিতীয় উপায়: বন্ধুরা চুলের গোঁড়ায় হেয়ার ফলিকল থাকে। ভাইব্রেশনের মাধ্যমে যদি ফলিকল উদ্দীপিত করা যায় তবে নতুন চুল গজানো সম্ভব। বাজারে ভাইব্রেটিং ম্যাসেজার কিনতে পাওয়া যায়। এর সাহায্যে আপনারা স্ক্যাল্পে চক্রাকারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাথায় ভাইব্রেটিং ম্যাসাজ নিতে পারেন। যে জায়গায় বেশি চুল পড়ে যাচ্ছে, তাতে বেশি মনোযোগ দিন। এভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট আপনাদের স্ক্যাল্প ভাইব্রেট করুন। ভালো ফল পেতে এটাও আপনাদেরকে দিনে ৩ বার করতে হবে।

তৃতীয় উপায়: পাঠক বন্ধুরা হাতে শ্যাম্পুর বোতল পিছে পাতার ব্যাকগ্রাউন্ড-shajgoj.comএমন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে যেটা আপনাদের স্ক্যাল্পের মৃত কোষগুলো ঝরে যেতে সাহায্য করবে। এই মৃত কোষগুলো স্ক্যাল্পের ফলিকল ব্লক করে রাখে, যে কারণে নতুন চুল গজানোর পথে বাঁধা দেয়। কেননা তখন স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু নিয়ে মাথায় ম্যাসাজ়ের মত করে লাগিয়ে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এটা দিনে একবার করতে হবে।

চতুর্থ উপায়: নতুন চুল গজানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করতে হবে।

(১) প্রোটিন বন্ধুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। আমাদের চুল মূলত কেরাটিন দিয়ে গঠিত। এটি অ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরণের প্রোটিন। তাই নতুন চুল গজানোর জন্যে অবশ্যই আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করতে হবে। মাছ, মাংস, পনির, দুধ, ডিম – আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিনই এগুলোর অন্তত একটি রাখার চেষ্টা করবেন।

বন্ধুরা নতুন চুল গজানোর জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার মাছ, মাংস, পনির সয়াবিন, মটরশুঁটি, কলা, বাদাম ইত্যাদি থেকেও পেতে পারেন। তবে নন-ভেজিটেরিয়ান খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।

২) আয়রন আর জিঙ্ক আয়রন আর জিঙ্ক আপনাদের মাথার কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে নিতে সহায়তা করবে আর নতুন টিস্যু তৈরিতে এবং ক্ষয়রোধে সহায়তা করবে। পরিমিত পরিমাণে আয়রন আর জিঙ্ক নতুন এবং দ্রুত চুল গজানোর জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মটরশুঁটি, বাদাম, কলিজা, মাংস, দুধে আপনার প্রয়োজনীয় জিংক আর আয়রন বিদ্যমান।

৩) ভিটামিন সি পেয়ারা, লেবু, কমলা, আনারস, কামরাঙা, কাঁচা মরিচে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আপনার চুলের বৃদ্ধি এবং গজানোর জন্য সহায়ক।

৪) কালোজিরা কালোজিরা নতুন চুল গজানোর জন্যে সহায়ক। মাথায় কালোজিরার তেল ব্যবহার করা আর খাবারে কালোজিরা ব্যবহার খুব ভালো ফল দেয়।

চুলের কিছু সাধারণ যত্ন

  1. নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখা এবং আঁচড়ানো। কিন্তু অতিরিক্ত আঁচড়ানো চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।
  2. পেঁয়াজ এর রস চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন | নিয়মিত ব্যবহার করলে নতুন চুল গজাবে।
  3. মেহেদি পাতা কিছু দিন ঘন ঘন ব্যবহার করবেন। পাতা বেটে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
  4. শুকনা আমলকি পানিতে ভিজিয়ে লাগাতে পারেন।
  5. খাঁটি কালো জিরা তেল বা নির্যাস বেশি বেশি ব্যবহার করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *