বাংলাদেশের মাজারের তালিকা: বাংলাদেশী প্রাচীন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশ পীর আউলিয়ার দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের সাধারণত প্রাচীনকালে পীরদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যেত। মানুষ ধর্মীয় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি জানার জন্য ফিরে সংস্পর্শে আসতে এবং নিজেকে ফিরে সেবায় নিয়োজিত করে রাখত। তাইতো বাংলাদেশে প্রতিটি অঞ্চলে মূলত বড় বড় পীরগণের মাজার লক্ষ্য করা যায় কেননা পীরের জনপ্রিয়তার কারণে এই মাজারগুলো তৈরি করা হয়েছে। যদিও বর্তমান সময়ে পীরের প্রচলন নেই বললে চলে কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে মাজার গুলোর ব্যবহারে কোন লক্ষ্য করা যায়। এখনো অনেকেই ধর্মীয় গোঁড়ামি কুসংস্কার কারণে মাজারে অবস্থান করে থাকে। তাইতো অনেকেই অনেক সময় বাংলাদেশের মাজারের তালিকা এবং কবর ও মাজারের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্য আজকে প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশের মাজারের তালিকা ও কবর এবং মাজারের মধ্যবর্তী পার্থক্য সম্পর্কে আপনাদের মাঝে সকল ধরনের তথ্য তুলে ধরব।
প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশ ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তুলনায় অনেক দূর এগিয়েছিল। বর্তমান সময়ের মতো সঠিক জ্ঞান কিংবা উপযুক্ত হাদিসের আলোকে তখনকার মানুষের জীবনধারা পরিচালিত হতো না কিন্তু সে সময়ে মানুষ ধর্মীয় বিভিন্ন ধরনের রীতি-নীতি অনুশাসন সে যুগের পীর কিংবা অলি আউলিয়াদের কাছ থেকে জেনে নিতো। সেজন্য অনেক সাহিত্যিক বাংলাদেশকে পীর আউলিয়ার দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন কেননা বাংলাদেশের প্রাচীনকালে প্রতিটি অঞ্চলে অগণিত পীরের সমাগমগড় তো সাধারণ মানুষ মূলত পীরের দরবারে কিংবা পীরের রাজধানী গিয়ে ধর্মীয় বিভিন্ন ধরনের কথা বিষয় সম্পর্কে জেনে তাদের বাস্তব জীবনে তা পরিচালনা করত। প্রাচীনকালে বাংলাদেশের এই পীরের প্রতি বিশ্বাস মূলত বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে পীরদের মাজার এবং বিভিন্ন ধরনের আস্তানা তৈরিতে সহায়তা করেছে কেননা সে সময় মানুষের কাছে ফিরে জনপ্রিয়তার কারণে মূলত বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের প্রতিটি পীরের মাজার রয়েছে এটা মাজার ভক্ত মানুষের নিকট পবিত্র স্থান মনে হতো। বর্তমান সময়ে কোরআন হাদিসের রিসার্চের কারণে যদিও বর্তমান অধিকাংশ মানুষ মহান আল্লাহতালার উত্তম জীবন বিধানের আলোকে জীবন পরিচালনা করার সুযোগ পাচ্ছে এরপরে অনেকেই রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে এখনো মাজারে অবস্থান করে থাকে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পীরের তালিকা। বাংলাদেশের মাজারের তালিকা
বাংলাদেশের মাজারের তালিকা
প্রাচীনকাল থেকে মূলত বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের মাজার গড়ে উঠতো এবং বাংলাদেশের জনসাধারণ মাজারে গিয়ে তাদের মনের আর্জি কিংবা মনের বাসনা গুলো প্রকাশ করতো। এক কথায় তারা মাজার কে খুবই বিশ্বাস করতে এবং শ্রদ্ধা করতো। তাইতো মানুষের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার কারণে মূলত সে সময়ে প্রতিটি পীরের মাজার বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে তৈরি করা হয়েছে। তাইতো অনেকেই বাংলাদেশের মাজারে তালিকা সম্পর্কে তথ্যগুলো জানতে চান তাদের জন্য আজকে আমরা বাংলাদেশের মাজারের তালিকাটি তুলে ধরেছি। আপনারা আমাদের এই প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের মাজারের তালিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন অর্থাৎ বাংলাদেশে কতগুলো মাজার আছে এ বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন। নিচে বাংলাদেশের মাজারে তালিকা তুলে ধরা হলো:
1. বাংলাদেশে মোট মাজারের সংখ্যা কত?
=৯৫০টি।
২.দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে কোন জেলায় মাজার নেই?
=বান্দরবান ও রাঙামাটি।
৩.হযরত খান জাহান আলী (রা.) এর মাজার কোথায় অবস্থিত?
=বাগেরহাটে।
৪.খান জাহান আলী (র.) কবে ইন্তেকাল করেন?
=২৬ জিলহজ ৮৬৩ হিজরি।
৫.খান জাহান আলী (র.) এর মাজারের পাশে বিশাল দীঘি এর নাম কি?
=ঠাকুর দিঘি।
৬.হযরত শাহজালাল (রা.) এর মাজার কোথায় অবস্থিত?
=সিলেটে।
৭.গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের মাজার কোথায় অবস্থিত?
=সোনারগাঁয়ে।
৮.হযরত শহজালাল (র.) কোন রাজাকে পরাজিত করে সিলেট অধিকার করেন?
=রাজা গৌড়গোবিন্দ।
৯.তিন নেতার মাজার কোথায় অবস্থিত?
=ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১০.তিন নেতার মাজারের স্থপতি কে?
=শিল্পী মাসুদ আহমেদ।
১১.বিখ্যাত সাধক বায়েজিদ বোস্তামী (র.) এর মাজার কোথায় অবস্থিত?
=চট্টগ্রামে।
১২.বিখ্যাত সুফি শাহ মখদুম (র.) এর মাজার কোথায়?
=রাজশাহীতে।
মাজার – সমাধি
স্থান – অবস্থান
পরিবিবির মাজার – লালবাগ, ঢাকা
সাত গম্বুজ মসজিদ সমাধি – মোহাম্মদপুর, ঢাকা
সোনা বিবির মাজার – সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ
হাজী খাজা শাহবাজের সমাধি – লালবাগ, ঢাকা
গিয়াসউদ্দীন আযম শাহের মাজার – সোনারগাঁ, নারায়নগঞ্জ
বিবি মরিয়মের সমাধি – নারায়নগঞ্জ
শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর সমাধি – শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
শামসুদ্দিন তাবরিজি সমাধি – শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
নওয়াব গিয়াস উদ্দিন হায়দার সমাধি – লালবাগ, ঢাকা
নওয়াব নসরত জং সমাধি – লালবাগ, ঢাকা
নওয়াব সামসুদ্দৌলা সমাধি – লালবাগ, ঢাকা
নওয়াব কামুরদৌলা সমাধি – লালবাগ, ঢাকা
বিবি চম্পার সমাধি – লালবাগ, ঢাকা
শাহ সুলতান বখলির মাজার – মহাস্থানগড়, বগুড়া
শাহ ইরানী মাজার – নরসিংদী
জিন্দা পীরের মাজার – বাগেরহাট
খান জাহানের সমাধি – বাগেরহাট
মাজার ও কবরের পার্থক্য
মাজার ও কবরের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে তাই তো অনেক সময় অনেকেই মাজার ও কবরের মধ্যবর্তী পার্থক্য সম্পর্কে তথ্যগুলো জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। তাই তাদেরকে সহায়তা করার জন্য আজ আমরা মাজার ও কবরের পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। আপনারা আমাদের এই আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনসাধারণের আগ্রহের বিষয়ে মজার ও কবরের পার্থক্য সম্পর্কে নিজে জানতে পারবেন এবং সকলের মাঝে তথ্যগুলো শেয়ার করে তাদেরকে মাজার ও কবরের মধ্যবর্তী পার্থক্য জানাতে পারবেন। নিচে মাজার ও কবরে পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
কোনো মুসলিমকে যেখানে দাফন করা হয় ওই জায়গাকে ‘কবর’ বলা হয়। হাদিস শরিফে আছে, ‘মানুষের কবরটি হয়তো জান্নাতের একটি বাগান হবে অথবা জাহান্নামের একটি গর্ত হবে।’ বাগানকে আরবিতে ‘রওজা’ বলা হয়।
অতএব আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবিরা যেহেতু জান্নাতি, তদ্রূপ নেককার মুমিনরাও ইনশাআল্লাহ জান্নাতে যাবেন, তাই তাঁদের কবরকে সম্মানার্থে ‘রওজা’ও বলা যায়।
আর ‘মাজার’ও একটি আরবি শব্দ। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে জিয়ারতের স্থান। এই অর্থে শরিয়ত মতে সব মুমিনের কবরই ‘মাজার’, কেননা সব মুমিনের কবরই জিয়ারতের স্থান এবং কবরই জিয়ারত করা হয়ে থাকে।
তবে আমাদের দেশের অলি-বুজুর্গদের কবরকে ‘মাজার’ বলা হয়, যেহেতু সেখানে মানুষ বেশি জিয়ারত করে থাকে।
উল্লেখ্য, শরিয়তে আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.), সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও অলি-নেককারসহ সব মুমিনের কবরেই জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
তবে সিজদা করা, সাহায্য চাওয়া ও যাবতীয় কুসংস্কারের উদ্দেশ্যে কবর, মাজার ইত্যাদিতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং কবর পাকা করা ও তার ওপর কোনো কিছু নির্মাণ করাও নিষিদ্ধ।
সূত্র : তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬০, বুখারি, হাদিস : ১৩৩০, মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৭, ৯৭০, আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪২