ফজরের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মধ্য হতে একটি হল নামাজ। নামাজ ইসলামের ভিত্তিও বটে। দৈনন্দিন জীবনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ। আল্লাহর তা’য়ালা স্বয়ং কুরআনুল কারীমে নামাজ পড়ার আদেশ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন: حٰفِظُوْا عَلَى الصَّلٰوتِ وَالصَّلٰوةِ الْوُسْطٰىْ وَقُوْمُوْا لِلّٰهِ قٰنِتِيْنَ
অর্থাৎ, জাগ দৃষ্টি রেখ সমস্ত নামাযের প্রতি এবং মধ্যবর্তী নামাযের প্রতি। আর আল্লাহর সামনে আদব সহকারে দাড়াও। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৩৮)
اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই নামায মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা: আনকাবূত, আয়াত-৪৫)
এ ছাড়াও নামাজ সম্পর্কীয় বহু কুরআনের আয়াত এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে হাদিস বর্ণিত রয়েছে। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা বুঝা যায় যে, নামাজ আদায় করা প্রাপ্ত বয়স্ক নরনারীর উপর ফরজ।
প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে সে কাজের ব্যাপারে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। তদ্রূপ নামাজ পড়তে নামাজ আদায় করতে হলে কিভাবে নামাজ আদায় করতে হয়। সে সম্পর্কেও সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক। আজকে ফরজের নামাজ কত রাকাত, ফরজের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এবং ফরজের নামাজের সময় সম্পর্কে আলোচনা করব।
ফজরের নামাজ কয় রাকাত ও কি কি
মুসলমানগণ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। দিনের শুরু হয় যে নামাজ দিয়ে তা হল ফরজের নামাজ। আমরা জানি, আছর ব্যতীত বাকি চার ওয়াক্ত নামাজের আগে পরে কিছু সুন্নত রয়েছে। ফজরের ফজর নামাজের সংখ্যা দুই রাকাত। ফরজ নামাজের পূর্বে আরো দুই রাকাত সুন্নত পড়তে হয়। এই মোট চার রাকাত আদায় করতে হয়।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।” (মুসলিম, হাদিস নং : ৭২৫) অন্য হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নবী (সা.) ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাজে এত গুরুত্ব দিতেন যে, অন্য কোনো নফল (বা সুন্নত) নামাজে ততটুকু দিতেন না। (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং : ৭২৪)
এ সকল হাদিস দ্বারা ফরজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত পড়ার গুরুত্ব বুঝে আসে।
আরো পড়ুন: যোহরের নামাজ কয় রাকাত ও কিভাবে পড়তে হয় – ইসলামিক পোস্ট
ফজরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
ফজরের সুন্নত এবং ফজর নামাজ একই নিয়মে আদায় করতে হয়। পার্থক্য কেবল নিয়তের মাঝে। পাক পবিত্র অবস্থায় জায়নামাজে দাড়িয়ে কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়াবে। যদি ফরজের সুন্নত নামাজ আদায় করে। তাহলে সুন্নতের নিয়ত করবে এভাবে যে, আমি আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির জন্য ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি। যদি ফরজের ফরজ নামাজ আদায় করে। তাহলে ফরজ নামাজের নিয়ত করবে এভাবে যে, আমি আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টির জন্য ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ এই ইমামের পিছনে আদায় করার নিয়ত করছি।
এরপর তাকবীর তথা আল্লাহু আকবর বলে পুরুষগণ নাভির নিচে আর মহিলাগণ বুকের উপরে হাত বাঁধবে। এরপর এই দোয়া পড়বে:
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ
বাংলা উচ্চারণ: : সুবহানাকাল্লহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
ছানা পড়ার পর সূরা ফাহেতা পাঠ করবে। সূরা ফাহেতার সাথে অন্য আরেকটি সূরা বা পাঠ করবে। ইমামের পিছনে মুক্তাদি সূরা ফাতেহা বা অন্য কোনো সূরা পাঠ করবে না। এরপর তাকবীর তথা আল্লাহু আকবর বলে রুকুতে যাবে। রুকুতে গিয়ে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) দোয়াটি তিন বার, পাঁচ বার বা বিজোড় সংখ্যায় পাঠ করবে। এরপর سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (রব্বানা লাকাল হামদ) পাঠ করবে। যদি একাকী নামাজ আদায় করে। তাহলে উভয়টি পড়বে। আজ যদি ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করে তাহলে শুধু رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ পাঠ করবে। এরপর তাকবীর তথা আল্লাহু আকবর বলে সেজদা পড়বে। সেজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى (সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা) এই দোয়াটি তিন বার, পাঁচ বার বা বিজোড় সংখ্যায় পাঠ করবে। এরপর সেজদা থেকে উঠে বসবে। এরপর পুনরায় দ্বিতীয়বার সিজদাহ করবে। মনে রাখা ভালো, দুই সিজদার মাঝে এক তাসবীহ পাঠের সময় পরিমাণ বিলম্ব করতে হয়। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের মতই আদায় করবে।
দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সেজদার পরে বসবে। যাকে আখেরি বৈঠক বলা হয়। বসার পর আত্তাহিয়াতু, দরুদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাছুরা পাঠ করবে।
আত্তাহিয়াতু [তাশাহুদ]
– اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ. السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ. أَشْهَدُ أَن لَّاإِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
বাংলা উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়িবাত। আস্সালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আস্সালামু ‘আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আননা মুহাম্মাদান আদুহু ওয়া রাসুলুহু।
দুরুদ শরীফ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ, وبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمْيدٌ مَجِيْدٌ . –
বাংলা উচ্চারণ: আললাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আললাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দোয়া মাসুরা
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুল্মান কাসীরাওঁ ওয়ালা ইয়াগ ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা; ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গফুরুর রাহীম।
এরপর প্রথমে ডান দিকে এরপর বাম দিকে সালাম ফিরাবে।
আশা করছি, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা ফজরের নামাজ কয় রাকাত এবং ফজরের নামাজ আদায় করার পদ্ধতি জেনেছেন।